প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস
উত্তর লালুয়া ইউনিয়ন কাউন্সিল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইতিহাস:
উত্তর লালুয়া ইউনিয়ন কাউন্সিল মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলাধীন লালুয়া ইউনিয়নের মাঝেরহাওলা গ্রামে অবস্থিত। প্রায় ৫ একর জমির উপরে বিশাল খেলার মাঠ, বিশাল পুকুর, ও ২ টি দ্বিতল পাকা ভবন, একতলা ভবন ১ টি ও সেমিপাকা ১ টি টিনশেট ভবনসহ চারপাশে সবুজ গাছপালায় ঢাকা এক নয়নাভিরাম ক্যাম্পাস এই উত্তর লালুয়া ইউনিয়ন কাউন্সিল মাধ্যমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের উত্তর ও পশ্চিমে আন্ধারমানিক নদী, পূর্বে রামনাবাদ ও বড়বাইশদিয়া নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনা। এই মোহনায় গড়ে উঠেছে দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর পায়রা বন্দর। স্কুলের সীমানার পাশ ঘেঁষেই গড়ে উঠেছে দেশের সবচেয়ে বড় নৌঘাঁটি শের-ই-বাংলা নৌঘাঁটি। ভৌগলিকভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থিত এই বিদ্যালয়টি সৌন্দর্যের দিক দিয়ে কলাপাড়া উপজেলার অন্যতম সেরা সুন্দর ক্যাম্পাস হিসেবে বিবেচিত হতে বাধ্য।
যে কোন প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার পিছনে থাকে এর সুদীর্ঘ ইতিহাস ও কিছু মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রম। আমাদের বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠারও রয়েছে এক দীর্ঘ ইতিহাস। ১৯৬৫ সালের শুরুর দিকের কথা। সেই সময়ে লালুয়া ইউনিয়নের নয়টি গ্রাম যথাক্রমে ছোনখলা, চড়পাড়া, মহল্লাপাড়া, নয়াপাড়া, মনিরগুটিয়া, মাঝেরহাওলা, পশরবুনিয়া, গোলবুনিয়া, চিংগুড়িয়া এর জন্য লালুয়া বোর্ড সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে একটি মাত্র সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল । যেটি ছোনখলা গ্রামে বড় বাইশদিয়া নদীর তীরে অবস্থিত ছিল। ১৯৬৫ সনের কোন এক ঘূর্ণিঝড়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বড় বাইশদিয়া নদীতে বিলীন হয়ে যায়। ফলে নয়টি গ্রামের শিশু কিশোররা স্কুলশূন্য হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় তৎকালীন খেপুপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের (বর্তমানে খেপুপাড়া মডেল সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়) সহকারী শিক্ষক লালুয়া ইউনিয়নের কৃতিসন্তান জনাব আবদুর রশীদ মৃধা স্যার এর উদ্যোগে মাঝের হাওলা গ্রামের অধিবাসী মৃত জনাব হাশেম হাওলাদার এর বাড়িতে কাছাড়িঘরে একটি মক্তব কাম প্রাথমিক বিদ্যালয় এর কার্যক্রম শুরু করেন। এর কিছুদিনের মধ্যে জনাব আবদূর রশিদ স্যার তৎকালীন লালুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সন্মানিত চেয়ারম্যান জনাব বেলায়েত হোসেন বিশ্বাস এর সাথে আলাপ করে স্থানীয় শিশুকিশোরদের পড়াশোনার ব্যাপারে তার সহযোগিতা কামনা করেন। চেয়ারম্যান সাহেবের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় চিংগুড়িয়াতে অবস্থিত লালুয়া ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের অতিরিক্ত দুই কামরাতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। এটিই ছিল মূলত উত্তর লালুয়া ইউ.সি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভিত্তি স্থাপন। ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের কামরায় কার্যক্রম শুরু হয়েছিল বলে চেয়ারম্যান এর পরামর্শেই বিদ্যালয়ের নামের সাথে যুক্ত হয় ইউ.সি যার পূর্ণ রূপ ইউনিয়ন কাউন্সিল।
ইউনিয়ন কাউন্সিল পরিষদ ভবনে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলাকালে যারা দিনরাত পরিশ্রম করছিলেন তারা হলেন- জনাব আবদুর রশিদ মৃধা স্যার, জনাব নুর ইসলাম মৃধা, জনাব আবদুল ওহাব মৃধা, জনাব দলিল উদ্দিন, জনাব আবুল হোসেন মোল্লা এবং বিদ্যালয়ের কক্ষ ও সার্বক্ষণিক তদারকির কাজ করতেন জনাব আছব্বর আলী মৃধা। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে এদের ত্যাগ ও পরিশ্রম অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। ১৯৭০ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের পর ইউনিয়ন পরিষদ ভবন চিংগুড়িয়া গ্রাম থেকে বানাতিবাজার স্থানান্তর এর প্রয়োজন দেখা দেয়। ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম আবার ভবন সংকটে পড়ে। চেয়ারম্যান জনাব বেলায়েত হোসেন বিশ্বাস সাহেবের সহযোগিতায় মাঝেরহাওলা গ্রামে (বর্তমান স্কুল প্রাঙ্গনে) একটি টিনসেট সাইক্লোন সেল্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়। সাইক্লোন সেল্টার কে বিদ্যালয় ভবন আর চেয়ারম্যান সাহেবের প্রত্যক্ষ আর্থিক সহযোগিতায় আবার শুরু হয় বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। স্থানীয় দাতাদের সহযোগিতায় দুই একর জমি নিয়ে ক্যাম্পাস গড়ে ওঠে। পড়ে দাতাদের আরো সহযোগিতায় প্রায় ৫ একর জমি নিয়ে গড়ে ওঠে আজকের নান্দনিক ও বিশাল উত্তর লালুয়া ইউনিয়ন কাউন্সিল মাধ্যমিক বিদ্যালয় এর ক্যাম্পাস। দাতারা হলেন- ১। জনাব মোঃ খাদেম আলী মৃধা ২। জনাব মোঃ মোন্তাজ উদ্দিন মৃধা ৩। জনাব মোঃ আমজেদ হোসেন মৃধা ৪। জনাব মোঃ মুজাফফর আলী মৃধা ৫। জনাব মোঃ আবদূর রশিদ মৃধা ৬। জনাব মোঃ আছব্বর আলী মৃধা ৭। জনাব মোঃ হাফেজ উদ্দিন মৃধা ৮। জনাব মোঃ মাহাবুবুল আলম মৃধা ৯। জনাব মোঃ মকবুল হোসেন মৃধা ১০। জনাব মোঃ নুরুল হোসেন মৃধা ১১। জনাব মোঃ আলী আহম্মদ মৃধা ১৩। জনাব মোঃ সুলতান আহাম্মদ তালুকদার ১৪। জনাব মোঃ আনোয়ার হোসেন তালুকদার জনাব আবদুর রশিদ স্যার ও তার সহযোদ্ধাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ১৯৭৫ সালে বিদ্যালয়টি জুনিয়র মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অনুমোদন পায়। এবং অবশেষে ০১/০১/১৯৮০ সালে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অনুমোদন পায়। ১৯৭০ সাল থেকে টিনশেট ভবনেই ক্লাস হয়ে আসছিল। ১৯৯৪ সালে কারিতাশ সংস্থা একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ করে দেয়। এবং এ বছরেই ফেসিলিটিশ ডিপার্টমেন্ট থেকে একতলা একটি পাকা ভবন নির্মান করা হয় যা এখন বর্তমানে ছাত্রাবাসা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এরপর ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে আরেকটি দ্বিতল সাইক্লোন সেল্টার গড়ে ওঠে। এভাবেই শিক্ষার মহান ব্রত নিয়ে সেই ১৯৭০ সাল থেকে শুরু করে এগিয়ে চলছে উত্তর লালুয়া ইউনিয়ন কাউন্সিল মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে এই সুদীর্ঘ সময় ধরে সুখ্যাতি সম্পন্ন অনেক প্রধান শিক্ষক অত্যন্ত সুনামের সাথে বিদ্যালয় পরিচালনা করে এসেছেন। তারমধ্যে অন্যতম জনাব বিভূতিভূষণ হালদার স্যার, জনাব মোঃ সিরাজুল ইসলাম স্যার, মরহুম গাজী জয়নাল আবেদীন স্যার, জনাব আবদুল ওহাব মৃধা স্যার অন্যতম। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর ত্যাগের ফলেই উত্তর লালুয়া ইউনিয়ন কাউন্সিল মাধ্যমিক বিদ্যালয় আজ কলাপাড়া উপজেলার অন্যতম একটি নামকরা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। অগ্রজদের দেখানো পথেই বর্তমানে জনাব আবদুল লতিফ স্যার অত্যন্ত দক্ষতার সাথে বিদ্যালয় পরিচালনা করে শিক্ষার মহান ব্রত পালন করে চলেছেন।
সভাপতির বাণী
মানব জাতির সূচনা লগ্ন থেকে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে মানুষ প্রতিনিয়ত জ্ঞান ও কৌশল আয়ত্ব করে চলছে। আর শত সহস্র বছরের সঞ্চিত ও অর্জিত জ্ঞান শেখানো হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। যুগের প্রয়োজনে মানবের কল্যাণে সমাজ হিতৈষী ব্যক্তিরা কখনো কখনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। এমনিই ভাবেই দক্ষ, অভিজ্ঞ, জ্ঞানে সু-গভীর ও বিদ্যানুরাগী এক মহাপুরুষ মরহুম আব্দুর রশীদ সাহেবও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দক্ষ, যোগ্য, আদর্শ ও সুনাগরিক রূপে গড়ে তোলার অভিপ্রায় নিয়ে এলাকাবাসীর সহযোগিতায়, পপটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলাধীন লালুয়া ইউনিয়নস্থ মাঝেরহাওলা গ্রামে প্রাকৃতিক ও সু-নিবিড় পরিবেশে মানসম্মত ধর্মীয় ও আধুনিক বিদ্যাপীঠ হিসাবে ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করেছেন উত্তর লালুয়া ইউনিয়ন কাউন্সিল মাধ্যমিক বিদ্যালয় । সঠিক নৈতিক শিক্ষা ও যুগোপযোগী আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়ে বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি গুনগত ও মানসম্মত শিক্ষাদানে সক্ষম। বর্তমান সরকারের শিক্ষা বিষয়ক নির্দেশনা ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে শিক্ষকবৃন্দের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়, শিক্ষার্থীদের নিরলস অধ্যয়ন ও অধ্যবসায় এবং অভিভাবক ও সংশ্লিষ্ট সকলের প্রচেষ্টার ফলে বিগত বছর গুলোতে স্কুলের ফলাফল বেশ সুনাম বয়ে এনেছে।
প্রধান শিক্ষকের বাণী
১৯৭০ সালে উত্তর লালুয়া ইউনিয়ন কাউন্সিল মাধ্যমিক বিদ্যালয় এর ধারাবাহিক সাফল্যে এলাকাবসীর দাবী ও শিক্ষার্থীদের চাহিদার প্রেক্ষিতে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে কলাপাড়া উপজেলার অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছে। এটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালকবৃন্দ, শিক্ষকবৃন্দ, অভিভাবকবৃন্দ, শিক্ষার্থীদের ও সর্বোপরি এলাকাবাসীর সমন্বিত প্রচেষ্টার ফল। এলাকাবাসীর সেবার মনোভাব নিয়ে মান সম্পন্ন শিক্ষা প্রসারে এবং কৃতিত্বপূর্ণ ফল অর্জন করে এই প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যে একটি স্থান করে নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানের সার্বিক ক্ষেত্রে সফলতার জন্য মানুষের মাঝে এক ধরনের চাহিদা সৃষ্টি হওয়ায় তাঁরা তাঁদের কোমলমতি ছেলে মেয়েদের এই প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করাতে যথেষ্ট আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। প্রতিষ্ঠানের সাফল্যে অভিভাকগণের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ছাড়াও বিভিন্ন পর্যায়ে বেশ প্রসংশনীয় অবদান রাখছে। সবকিছুর মূলে রয়েছে প্রতিষ্ঠানের অটুট শৃঙ্খলা, শিক্ষকগণের একাগ্রতা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণের মধ্যে সমন্বয় সাধন। শিক্ষার্থীদেরকে উপযুক্তভাবে গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য আমাদের রয়েছে বিরামহীন চেষ্টা ও পরিকল্পনা।